এম.আর, মাহামুদ, চকরিয়া ঃ
পুলিশ জনগণের বন্ধু, অপরাধীদের জন্য আতঙ্ক। পুলিশ ছাড়া অপরাধ দমন কোনভাবেই সম্ভব নয়। বিশ্বের সব দেশের পুলিশ আছে। পৃথিবী হয়তো যতদিন থাকবে, ততদিন পুলিশ থাকবে। কারণ পুলিশ ছাড়া একটি দেশের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে রাখা কল্পনাও করা যায় না। সব দেশে পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হয়। তারা দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখে। মাঝে মধ্যে ব্যতিক্রম কিছু ঘটনায় দেশের আমজনতা চরম আশাহত হয়ে পড়ে। কারণ কুনাইন জ্বর সরাতে দিয়ে যদি গলায় আটকা পড়ে, তখন কিন্তু রোগাক্রান্ত ব্যক্তির জীবন বিপণœ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। সম্প্রতি কিছু কিছু পুলিশ সদস্যের কর্মকান্ড সংবাদপত্র ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দেখে মানুষ চরমভাবে হতাশাগ্রস্থ হয়। অপরাধ দমনে বিশ্বস্ত একটি প্রতিষ্ঠানের সদস্যরা যখন ননা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে, তখন হতাশ হওয়া ছাড়া করার-ই-বা কি আছে। কারণ মানুষ যখন বিপদে পড়ে, বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য পুলিশের শরণাপন্ন হয়। যেভাবে পারে পুলিশ বিপণœ ও ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিকে আইনী সহায়তা দিয়ে থাকে। মাঝে মধ্যে তার ব্যতিক্রমও ঘটতে দেখা যায়। প্রভুভক্ত কুকুরও কোন কোন সময় মালিককে কামড়াতে ভুল করে না। গত ২৫ অক্টোবরের সবক’টি পত্রিকায় একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে “ফরিদপুর পুলিশ সুপার সুভাষ চন্দ্র শাহা ও তার স্ত্রী রিনা চৌধুরীর নামে ৩টি এফডিআর-এ ৮ কোটি টাকার সন্ধান পেয়েছে। এ আয়ের উৎস সম্পর্কে যথাযথ প্রমাণ উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশন (দূদক) মামলা করেছে। অভিযুক্ত এস.পি জেলার একজন শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা। তার ও তার স্ত্রীর এফডিআর-এ যদি এতটাকা জমা থাকে তাহলে বলতে হয় “ছড়ায় যদি এত পানি থাকে, সমুদ্রের অবস্থা কি?” এর বেশি মন্তব্য করা যথাযথ হবে বলে মনে করিনা। অনেকেই মনে করছে এ পরিমাণ টাকা সঞ্চয় করতে গিয়ে ওই এস.পি এদেশের অসংখ্য নাগরিকের পকেট সাবাড় করেছেন হর-হামেশা। সেক্ষেত্রে তিনি তার পদ-পদবী ও সরকারী উর্ধ্বির ভয় দেখিয়েছে অনায়াসে। অপরদিকে আজ বুধবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা গেছে কক্সবাজারের ডিবি পুলিশের ৭ সদস্যকে মুক্তিপন বাবদ আদায়কৃত ১৭ লাখ টাকাসহ আটক করেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ উপজেলার সাবরাং রোহিঙ্গা ত্রাণ ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা মেজর নাজিম আহমেদ। টেকনাফ পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মুনিরুজ্জামানের ভাই ব্যবসায়ী আবদুল গফুরকে ডিবি পুলিশ অপহরণ করে নিয়ে যায়। তাকে মুক্তির জন্য দেন দরবার শুরু করলে মুক্তিপন হিসেবে দাবী করে বসে ৫০ লাখ টাকা। পরে তার পরিবারের পক্ষ থেকে ১৭ লাখ টাকা নগদ পরিশোধ করলে তাকে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়ক এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেয়। বিষয়টি নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে অবহিত করলে ওই সড়কের সৈনিকদের একটি চৌকিতে ডিবি পুলিশের গাড়ীটি পৌছলে সেনা সদস্যরা তা তল্লাশী শুরু করে। এসময় ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক মর্যাদার এক সদস্য পালিয়ে গেলেও অপরাপর ৭ সদস্য ধরা পড়ে যায়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় মুক্তিপন বাবদ আদায়কৃত ১৭ লাখ টাকা। বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর কক্সবাজার জেলা পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা দেন-দরবার করে তাদেরকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে যায়। তবে উদ্ধারকৃত ১৭ লাখ টাকা এখনো সেনাবাহিনীর হাতে রয়েছে। এদিকে কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল ওই ৭ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্তের কথা শিকার করেছেন। বরখাস্তকৃতরা হলেন- এস.আই আবুল কালাম আজাদ, এস.আই মনিরুজ্জামান, এ.এস.আই মোঃ ফিরুজ, এ.এস.আই মোস্তফা কামাল, এ.এস.আই আলাউদ্দিন, কনস্টেবল মোস্তফা আজম ও কনস্টেবল মোঃ আল আমীন। এ ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যাওয়ায় পুরু জেলায় পুলিশের ভাবমুর্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। পুলিশের কিছু কিছু সদস্য মনে করে তারা আইনের উর্ধ্বে। আসলে আইনের উর্ধ্বে কেউই নয়। অপরাধ করে কেউ পার পেয়ে যাচ্ছে। কেউবা ধরা পড়ে “ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে” অবস্থায়। আর যদি অপহরণকারী দলের সদস্যরা এভাবে পুলিশের হাতে ধরা পড়ত তাদেরকে নিয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে গণমাধ্যম ও ইলেক্ট্র্রনিক্স মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার করা হত। কিন্তু অপরাধী দলের সদস্যরা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নিজস্ব লোক হওয়ায় এসব হয়ত কিছুই হবে না। তাদের ছবি সংবাদ পত্রে বা টিভির পর্দায় দেখা যায়কিনা জানিনা। কিন্তু সব মানুষের কাছে জানা হয়ে গেছে বিষয়টি। এলাকাবাসী এসব পদ পদবীধারী উর্দ্দিপরা (সম্প্রতি বহি®কৃত) আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের বিচারের মুখোমুখি করা না হলে পুলিশের ভাবমুর্তি পুণঃ উদ্ধার করা কঠিন হয়ে দাড়াবে। কথায় আছে লাখ টাকার বাগান খায় ৭ টাকার ছাগলে।
পাঠকের মতামত: